রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ) হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাঁকে জেনেছে, তারা তাঁকে ভালোবেসেছে; যত বেশি জেনেছে, তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাঁকে জানেনি, তাঁরা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না-দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।
গল্পের নায়কদের কথা মানুষ খানিক বাদেই ভুলে যায়, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের প্রভাব টিকে থাকে বড়জোর কয়েকটা বছর, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন একজন যাকে এত বছর পরেও লোকেরা ভালোবাসে, তাঁর অনুসরণ করে, তাঁর সম্মানে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়। জীবদ্দশায় আবু জাহেলরা তাঁকে ভয় করতো, মৃত্যুর পরে আবু জাহেলের উত্তরসূরিরা তাঁর অনুসারীদের ভয় করে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে জাতির কাছে ‘মুহাম্মাদ’ (সাঃ) আছে, সে জাতিকে আজ টং দোকানের মামা থেকে শুরু করে বারাক ওবামা প্রত্যেকেই দিকনির্দেশনা দিতে ব্যতিব্যস্ত। মুসলিমদেরকে আজকে অমুসলিমরা ইসলাম শেখায়, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির সবক দেয়। বিষয়টা লজ্জা আর গ্লানির।
আমরা রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) চিনলেও তাঁকে আমরা জানিনা। জানিনা বলেই তিনি কারো কাছে নিছক একজন ‘ভালো মানুষ’, আর দশজন মনীষির মতো, যারা কিনা কিছু দার্শনিক তত্ত্ব আর নীতিকথা বলেই খালাস! কিংবা কারো কাছে তিনি বড়জোর একজন ‘ধর্মপ্রচারক’, কিছু ভালো ভালো কাজ করেছেন, এই যা!
কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন রাসূল। তিনি একটা গ্লোবাল মিশন নিয়ে এসেছিলেন এবং আমরা সেই মিশনের অংশ। আল্লাহ এই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিকে পাঠিয়েছেন আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে পথ দেখানোর জন্য। তিনি মানুষকে সেই পথ দেখিয়ে গেছেন যে পথ খুঁজে পেতে আমাদের বুদ্ধিজীবী-দার্শনিক-বিজ্ঞানী- আমলারা মাথা কুটে মরে, কিন্তু সমাধান খুঁজে পায় না।
এই সমস্যার একটিই সমাধান। তা হলো রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) জানা। আর জানার জন্যই তাঁর সীরাত পড়া। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সীরাত হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর ব্যক্তি জীবন, তাঁর নবুওয়াত, তাঁর নেতৃত্ব এবং তাঁর চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে একটি চমৎকার কাহিনীপ্রবাহ। রাসুলুল্লাহর (সাঃ) সীরাত পড়লে ইনশা আল্লাহ, ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সংকীর্ণ ধারণার দেয়ালগুলো ভেঙে পড়বে।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবন সম্পর্কে জানলে, ইসলামবিদ্বেষীদের প্রোপাগান্ডা শুনে আমাদের মনে যে ‘খচখচ’ হয় সেটা দূর হয়ে যাবে, বিইযনিল্লাহ। আমরা জানব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কত চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন। তিনি কারো মন জয় করতেন, কাউকে রুখে দিতেন, আর কাউকে মোকাবিলা করতেন। নিজের ঘর থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দান – প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব।
যারা তাঁকে ভালোবেসেছে, তাদের জীবন আমূল বদলে গেছে, যে জাতি তাঁর অনুসরণ করেছে, তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। এমন একজন মানুষ সম্বন্ধে যদি আমরা না জানি, না মানি, তাহলে তো আমরাই ‘মিস’ করলাম!
আদর্শিক দৈন্যতার কারণে ইতিহাস বলতে হয়তো আমরা ৫২ বা ৭১ এর আগে কিছু চিন্তা করতে পারি না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবাদের ইতিহাসের সামনে সকল ইতিহাসই ম্লান। পৃথিবীর যত বিপ্লব, তার সবক’টা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কিছু পরিবর্তন করে কয়েক দশক বা সর্বোচ্চ কয়েক শতক পরেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কিন্তু যে বিপ্লবের সূচনা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছেন, সেটা চলবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না মুসলিম জাতি সমগ্র পৃথিবীর উপর বিজয়ী হবে।
বিঃ দ্রঃ এই প্রজেক্টের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে অতিব্যস্ত ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহিণী-চাকুরীজীবী-ব্যবসায়ী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আইনজীবী সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারে। অনেকটা ম্যারাথন স্টাইলে। যতো ব্যস্ততাই থাকুক না কেনো রুটিনের মধ্যে থাকলে দিনে মাত্র ৫ পেজ পড়াই যায়। আর রুটিনের মধ্যে না থাকলে দিনে ৫ পেজ তো দূরের কথা, মাসে বা বছরেও ৫ পেজ পড়া হয় না। এটাই বাস্তবতা। রেগুলারিটি মেইনটেইন করে ধীরে ধীরে পড়ার ফলে পড়াটাও ভালো হবে।